বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

imran

ঘূর্ণিঝড় অসনির আশঙ্কায় অগ্রিম আম পেড়ে ফেলছেন সাতক্ষীরার চাষিরা

ঘূর্ণিঝড় অসনির আশঙ্কায় অগ্রিম আম পেড়ে ফেলছেন সাতক্ষীরার চাষিরা
মুহা: জিললুর রহমান , সাতক্ষীরা।। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ি আগামী ১২ মে নাগাদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশের খুলনা ও সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানতে পারে দক্ষিণ আন্দামান সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অসনি। গত বছরের আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতির তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে এবার আম পাড়ার মৌসুমের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার আম চাষীরা। ফলে সম্ভাব্য ক্ষতির আশংকায় নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাড়তে শুরু করেছেন চাষিরা।
সাতক্ষীরার আম চাষীরা জানান, গত বছর আম পাড়ার ভরা মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে গাছের সব আম ঝরে পড়ে যায়। এতে
করে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন জেলার আম চাষীরা। অনেকে পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এবছর মহাজনের
কাছ থেকে অগ্রিম দাদন নিয়ে অনেকে আম বাগান কিনেছেন। কিন্তু সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার ফলন অনেক কম। তার ওপর আগামী
সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই আম পাড়তে শুরু করেছেন সাতক্ষীরার অনেক চাষিরা।
জানা যায়, সাতক্ষীরায় কেমিক্যাল বিহীন আম বাজারজাত করার লক্ষে সরকারি নির্দেশনায় প্রতিবছর জেলায় আম ভাঙার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ মে থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বায়, ক্ষীরশাপাতি, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ অন্যান্য আগাম স্থানীয় জাতের আম, ১৬ মে থেকে হিমসাগর, ২৪ মে থেকে ল্যাংড়া ও পহেলা জুন থেকে আম্রোপালি আম ভেঙে বাজারে তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ি গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) থেকে জেলার বাজারে গোবিন্দভোগ জাতের আম বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে অপুষ্ট হীমসাগর আম বাজারে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় অসনি আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকায় এবার সরকারি নির্দেশনা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। একই সাথে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় লোকসান ঠেকাতে শনিবার থেকে চাষীরা প্রায় সব ধরনের আম ভাঙ্গা শুরু করেছেন। জেলা শহরের অদূরে ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর সহ

বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে চাষীরা গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বায়, ক্ষীরশাপাতি, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ অন্যান্য জাতের আমের সাথে হিমসাগর আমও পেড়ে ফেলছেন। ধুলিহর এলাকার আম চাষী মোকলেছুর রহমান জানান, গত বছর ভরা মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে তার সব বাগানের আম ঝরে যায়। এতে তার ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। এবার আম পাড়া মৌসুমের
শুরুতেই শুনছি আগামী সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় অসনি আঘাত হানবে। প্রশাসনের বিধিনিষেধ থাকায় হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম পাড়া যাচ্ছে
না। তবে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কায় আতংকিত হয়ে অনেক আম চাষী ইতিমধ্যে হিমসাগর আম পাড়া শুরু করেছেন। তার এলাকার অনেকেই
শনিবার দিনভর হিমসাগর আম পেড়েছেন জানিয়ে তিনি আম চাষীদের ক্ষতি পোষাতে বিধিনিষেধ শিথিলের জন্য প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ
কামনা করেন।
সাতক্ষীরা জেলা আমচাষি সমিতির সভাপতি লিয়াকাত হোসেন বলেন, করোনা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গত কয়েক বছর চাষিরা আমচাষে
লোকসানে আছেন। চলতি মৌসুমে ফলন কিছুটা কম। এবার চাষিরা আশা করেছিলেন ভালো দামে আম বিক্রি হবে। সরকারি নির্দেশনা
অনুযায়ী আম পাড়ার জন্য আমাদের চাষিদের বলা হয়েছে। কিন্তু আগামী সপ্তাহে একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে এই শঙ্কায় অনেকে গাছ থেকে
আগাম আম পাড়তে শুরু করেছেন। তবে এসব আম কাঁচা বিক্রি করা হবে বলেও জানান তিনি।
সুলতানপুর বড় বাজার কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, সরকারি নির্দেশনায় বৃহস্পতিবার থেকে
গোবিন্দভোগ আম ভাঙা শুরু হয়েছে। বড় বাজারের প্রতিটি আমের আড়তে শুধুমাত্র গোপালভোগ, গোবিন্দভোগসহ আগাম জাতের আম
বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথমদিন প্রতিমণ কাঁচাআম বিক্রি হয়েছে ২০০০ থেকে ২৮০০ টাকায়। অন্য জাতের আম পাড়ার বিষয়ে জানতে
চাইলে তিনি বলেন, অনেকে গোপনে বাগান থেকেই হীমসাগর আম পেড়ে বিক্রি করছেন। ওই আম ১৬ তারিখের আগে বড় বাজারে বিক্রি
হবে না।
সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, এবার জেলায় আমের ফলন কিছুটা কম। সময়মতো বৃষ্টি না
হওয়ায় অনেক গাছেই ফলন হয়নি। যেসব গাছে আম হয়েছে সেগুলোও আকারে ছোট। আগামী সপ্তাহে একটি ঘূর্ণিঝড়ের কথা শোনা
যাচ্ছে, এজন্য চাষিদের আগাম জাতের আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী

গোপনে অপুষ্ট হীমসাগর আমও পাড়ছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদেশে আম রপ্তানির বিষয়ে তিনি বলেন, আম রপ্তানির জন্য এবারো  আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শুধুমাত্র নির্ধারিত বাগানের আম বিদেশে রপ্তানি হবে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে।
জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার
আমচাষি রয়েছেন।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: