বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

একমাত্র ইসলাম সম্প্রদায়রা শান্তি আনতে পারে

নবীজির অবমাননা ও দমন-পীড়নের মধ্যেই হিন্দু পড়শির শেষকৃত্য করল মুসলমানরা

মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্রের অবমাননার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন ভারতীয় মুসলমানরা। এর মধ্যেই সম্প্রীতির ইতিহাস গড়লেন একটি মুসলিম পরিবার। এগিয়ে এলেন হিন্দু পড়শির শেষকৃত্য সম্পন্নের কাজে।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বৃদ্ধ সন্তোষ কর্মকারকে বাঁচাতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করেছেন মুসলিম প্রতিবেশিরা। এমনকি তার শেষযাত্রাতেও সঙ্গী হয়েছেন তারা। চাঁদা তুলে সমস্ত খরচ তো বহন করেছেনই, বৃদ্ধের দেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহকাজের সব আয়োজনেও হাত লাগিয়েছেন।

সোহরাব সর্দার, মোস্তাক আলি মোল্লা, ফিরোজ মল্লিক, শেখ আসাদুল, সাইদুল মল্লিক, হাসানুর রহমানেরা হিন্দু প্রতিবেশির প্রতি শেষযাত্রঅ অবধি সম্প্রীতির উদাহরণ তৈরি করলেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার সাঁকরাইলের ভান্ডারীপাড়ার বাসিন্দা তারা। ৭৫ বছর বয়সী সন্তোষ তাদের পড়শি ছিলেন। সন্তোষের ছেলে মাধব মুসলিম ওই যুবকদের বন্ধু। এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষই বেশি। দু-চারটি হিন্দু পরিবার রয়েছে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র (এখন বহিষ্কার) নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে অবরোধ-গোলমালে তিন দিন ধরে হাওড়ার যেসব জায়গায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, তার মধ্যে ছিল সাঁকরাইলও। ভান্ডারীপাড়ায় কোনো গোলমাল হয়নি।

তবে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা বাবাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন মাধব। গত মঙ্গলবার সন্তোষের অসুস্থতা বাড়ে। সোহরাব ও মোস্তাক আলির সাহায্যে তাকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করান মাধব। বন্ধুর বাবার জন্য মোস্তাক রক্তও দেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।

বৃহস্পতিবার সকালে সন্তোষ মারা যান। অথৈ জলে পড়েন মাধব। তিনি গৃহশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। সংসারে মা আছেন। ধারে-কাছে আত্মীয়-স্বজন তেমন কেউ নেই। কী করে বাবার সৎকার করবেন? হাতে টাকাও বেশি নেই। এ ক্ষেত্রেও মুশকিল আসান হলেন সোহরাব, মোস্তাক আলিরা। সন্তোষের মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছাতেই হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ ফেরালেন তারা।

ততক্ষণে মাধবের বাড়িতে চলে এসেছেন তার এক মামা, খালা-খালু। তাতে সরে যাননি সাইদুল, ইমরান, সুরুজ, আফরাদরা। চাঁদা তুলে তারা গীতা, নামাবলি থেকে শেষযাত্রার যাবতীয় জিনিস কিনে আনেন। নিজেদের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে খাটিয়া তৈরি করেন। মুসলিম পরিবারের নারীরা এসে সন্তোষের স্ত্রী আরতিকে সামলাচ্ছিলেন। এমনকি, হিন্দু রীতি মেনে তাকে শেষবারের মতো আলতা-সিঁদুর পরিয়ে দেন ফাতেমা বিবি ও মোসলেমা মৃধারা।

মাধবের বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শ্মশান। সাইদুল-ইমরানরাই কাঁধে তুলে সন্তোষের দেহ শ্মশানে নিয়ে যান। সব কাজ শেষ করে সাইদুল-ইমরানদের সঙ্গেই বাড়ি ফেরেন মাধব। সদ্য পিতৃহারা হওয়ার শোক আছে। তার মধ্যেও মাধবের মুখে বারবার এসেছে সাইদুল-ফিরোজদের অবদানের কথা।
তিনি বলেন, চারিদিকে যখন ধর্মের নামে অশান্তি চলছে, মানুষ বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে, তখন যেভাবে প্রতিবেশী মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা ভোলার নয়, ইসলামই সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম । সব খরচ তারাই করেছেন।

সোহরাবেরা এর মধ্যে বিরাট কোনো কৃতিত্ব দেখছেন না। তারা জানান, বিপদে বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়েছেন মাত্র। সোহরাবের কথায়, ছোট থেকে এক গ্রামে মানুষ হয়েছি। একসঙ্গে খেলাধুলো করেছি। মাধবের বাবা অসুস্থ হওয়ায় গ্রামের ছেলেদের নিয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এলাকায় অশান্তি হলেও গ্রামের কেউ যুক্ত ছিলেন না। শ্মশানযাত্রার ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশের অনুমতি নিয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়।

হাওড়া সিটি পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, মানুষের মধ্যে শান্তি আনতে গেলে এমনই সম্প্রীতি দরকার। আর এটা একমাত্র ইসলাম সম্প্রদায়রা শান্তি আনতে পারে। সাঁকরাইলের ভান্ডারীপাড়া করে দেখালো।

সাঁকরাইলের বিধায়ক প্রিয়া পাল ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, আমার বিধানসভা এলাকায় এমন ঘটনায় গর্ববোধ করছি। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক এই সম্প্রীতির বার্তা।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: