শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

অপহরণের ঘটনায় ইভটিজিং বলে সাজা দেয়ার অভিযোগ সাতকানিয়া এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে

সাতকানিয়ায় মিনি ট্রাকে করে সংঘবদ্ধ একটি  গ্যাং সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়েকে তুলে নেয়ার জন্য টানা-হেঁচড়া করলে মেয়েটির চেঁচামেচিতে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অপহরণকারীরা দ্রত ট্রাকযোগে পালিয়ে যায়। তবে গ্যাংয়ের এক অপহরণকারী আটক হলে তাকে থানায়  নিয়ে আসার পথিমধ্যে সাতকানিয়ার এসিল্যান্ড মং চিংনু মার্মা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অপহরণের ঘটনা আড়াল করে ইভটিজিংয়ের সাজা দেন বলে প্রকাশ্যে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।

সাতকানিয়ার  দক্ষিণ ঢেমশার ছৈয়দাবাদ এলাকার উলুম দুধু ফকির আহমদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার উত্তর পার্শ্বে আজম পাড়ার ব্রিজের ওপর গত ২৭ জুলাই বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনতা কর্তৃক আটককৃত ব্যক্তি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত যুবক কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের নতুন পাড়ার সামশুল ইসলামের ছেলে মো. নাছির উদদীন (২৩)

সাতকানিয়া থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রামুর নাছির উদদীন ও দক্ষিন ঢেমশার ১নং ওয়ার্ডের আয়ুব আলীর ছেলে মন্জুরুল আলম (২৫) এবং ভোলা জেলার লালমোহন থানার গজারিয়া কচুয়াখালীর নুরুন্নবীর ছেলে মো. মহি উদদীন (৩৫)-সহ মোট ১০-১২ জনের একটি দল পিকআপযোগে (ছোট ট্রাক) উপজেলার ছৈয়দাবাদ এলাকার দুধু ফকির মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া জান্নাত রিমাশ নামে একটি মেয়েকে অপহরণ করার উদ্দেশ্যে আগে থেকেই মাদ্রাসার উত্তর পাশে আজিমপুর ব্রিজে ওতপেতে অবস্থান করে।

পরে প্রতিদিনের মতো রিমাশ তার দুই বান্ধবীকে নিয়ে হেঁটে মাদ্রাসা থেকে আসার পথে উপরোক্ত আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে অপহরণের উদ্দেশ্যে পিকআপ (মিনি ট্রাক) দাঁড় করিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলার পর অপহরণকারীদের সাথে থাকা মিনিট্রাকে তোলার চেষ্টা করে। পরে সাথে থাকা অন্য দুই বান্ধবীর চিৎকার ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বেঁচে যায় ছাত্রী জান্নাত রিমাশ। স্থানীয়দের কারণে ট্রাকে করে আসা অপহরণকারীদের দল তাৎক্ষণিকভাবে কক্সবাজারের দিকে পালিয়ে গেলেও স্থানীয়রা নাছির উদদীন নামে এক যুবককে আটকাতে সক্ষম হন। পরে স্থানীয়রা সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমানকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে আটক নাছির উদদীনকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসার সময়  ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সাতকানিয়া উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মং চিংনু মারমা।

অপহরণকারীকে থানায় নিয়ে আসা এসআই আব্দুল্লাহ আল মোমেনকে তিনি (ভূমি কর্মকর্তা) বলেন, থানায় নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। এটা আমি এখানেই সাজা দিচ্ছি। তখন তিনি অপহরণের ঘটনাকে ইভটিজিং বিষয়ক অপরাধ বলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটক নাছিরকে এক মাসের সাজা দেন। এই সাজাকে ভিকটিমের পরিবারসহ স্থানীয়রা মেনে নিতে পারেননি উল্লেখ করে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় কয়েকজনের নাম উল্লেখপূর্বক ভিকটিমের (ছাত্রীর) নানা জাগির হোসেন বাদী হয়ে  ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজাপ্রাপ্ত নাসিরকে ১নং আসামি উল্লেখপূর্বক মিনি ট্রাকে থাকা দুজনসহ আরো ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে অপহরণচেষ্টার কথা উল্লেখ গতকাল (শুক্রবার) রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

তবে আজ শনিবার (৩০ জুলাই) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে স্থানীয়রাও জানান একই কথা। স্থানীয়-হাজি আমিন শরীফের ছেলে মো.নুর ইসলাম(৫৫) বলেন -আমাদের এই বয়সে দেখিনি ট্রাকে করে এসে ইভটিজিং করতে আসতে।এটা মূলত পরিকল্পিত ভাবে তারা আসছিল ট্রাকসহ অপহরণ করতে কিন্তু শাস্তি হলো ইভটিজিং বিষয়ে।এদিকে এই বিষয়টা ইভটিজিং থেকে যাতে অপহরণ চেষ্টা মামলায় রূপান্তরিত হয় সেই আশাও আমি রাখি।

এদিকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে থানায় দেয়া দরখাস্তে তাকে( স্থানীয় নুর ইসলাম)কে সাক্ষী হিসেবেও রাখা হয়েছে।এদিকে সাতকানিয়া থানায় অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে লিখিত দরখাস্তের বাদী জাগির হোসেন বলেন-এসিল্যান্ডের মনগড়া এই রায় আমরা মানিনা এবং এলাকাবাসীরাও মানতে পারছেনা বলে পুরো ঘটনায় এসিল্যান্ডের রহস্যজনক ভুমিকা উল্লেখ করে আমি আটককৃত আসামিও পলাতক আসামীদের নাম উল্লেখপূর্বক একটি অপহরণ চেষ্টা মামলার এজাহার জমা দিছি। তিনি আরো বলেন-সংঘবদ্ধ একটি অপহরণকারীর চক্রকে বাঁচাতে এটা ইভটিজিং পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আসলেই এটি অপহরণ চেষ্টার মত ঘটনা।আমি আইনী ভাবে লড়ব।

এদিকে অপহরণের ঘটনাকে কেন ইভটিজিং বলে সাজা প্রদান করা হয় সেই অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাতকানিয়া উপজেলা ভূমি-কর্মকর্তা মং চিংনু মার্মাকে কল করা হলে,  তিনি তার ১মিনিট ৪০সেকেন্ডের বক্তব্যে বলেন-আমার কাছে মনে হয়েছে সেদিনের ঘটনাটা ইভটিজিং এর  -তাই আমি নাছিরকে ইভটিজিং দায়ে এক মাসের সাজা প্রদান করেছি,যদি অপহরণের বিষয় হয়ে থাকে তাহলে আপনি থানার সাথে যোগাযোগ করেন।পরে ওনাকে স্থানীয় আর ভিকটিমের পরিবারের প্রকাশ্যে আর লিখিত দাবীর বিষয়ে আরো ক্লিয়ার করার জন্য বলা হলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন-আপনাকে এই বিষয়ে আরো বেশী সময় দিয়ে ফেলছি আমি এখন বাইরে আপনি থানার সাথে যোগাযোগ করুন।তিনি আরো বলেন-মনে হয় ইভটিজার আর অপহরণ দুনোটা আলাদা আলাদা ঘটনা।

এদিকে ইভটিজিং থেকে অপহরণ?নাকি অপহরণের ঘটনায় ইভটিজিংয়ের সাজা ?এমন প্রশ্ন ওঠায় মামলাটির তদন্তকর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লাহ আল মোমেনকে অধিকতর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান সাতকানিয়া থানার ওসি তারেক হান্নান।অপরদিকে সাতকানিয়া আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদকও সরকারি আইনকর্মকর্তা এ্যাডভোকেট মেজবাহ উদদীন আহমদ চৌধুরী কচির বলেন-যদি অপহরণ চেষ্টারমত ঘটনা ঘটে থাকে তবে এখানে সামারি কোর্টের ম্যাজিষ্ট্রেট ভূমিকর্মকর্তার রায় -আইন বহির্ভূত এটা মাননীয় বিচারিক আদালতের সম্পূর্ন এখতিয়ার বর্তায়।

এখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সুযোগ নেই।তবুও আসলে সেদিন কি হয়েছিল তা তদন্ত করে বের করা দরকার যেহেতু একটি সাজা দেয়ার  বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।মোবাইল কোর্ট আইন অনুসারে জানাযায়-এই আইনের আওতায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং নির্ধারিত সীমার মধ্যে যেকোনো পরিমাণ অর্থদণ্ড আরোপ করতে পারবেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আপিল করা যায়। আর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজের কাছে আপিল করা হয়।তবে, মোবাইল কোর্ট২০০৯ আইনের ১৪ ধারা অনুসারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভুলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় জড়িত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন না।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: