শনিবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

৪ সূচকে উন্নতি, অর্থনীতিতে বইছে সুবাতাস

দেশের অর্থনীতিতে যে কালো মেঘ তৈরি হয়েছিল তা কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, আগে থেকে সরকার বিলাসী পণ্য আমদানিতে লাগাম টানায় এর সুফল পেতে শুরু করেছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আমদানি কমেছে, নেতিবাচক ধারায় থাকা রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে, মূল্যস্ফীতিও কিছুটা কমেছে আর আগের মতই ইতিবাচক ধারা বজায় রেখেছে রফতানি আয়। অর্থনীতির এই ৪ সূচকে উন্নতিতে আশার আলো দেখছেন তারা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমেছে। জুনে ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ । জুলাইয়ে এটা কমে দাঁড়িয়ে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, জুলাইয়ে তা কমে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য বর্হিভূত মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ে ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির চার সূচকে উন্নতি ইতিবাচক। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ এক মাসের উন্নতিতে বলা যাবে না যে অর্থনীতির গতিধারা ঘুরে গেছে। এজন্য সরকার আমদানি ও রফতানি তদারকির যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববাজারে কমে আসা পণ্যের দামের প্রভাব যাতে দ্রুত দেশের বাজারে দেখা যায়- সেদিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, চাল ও তেলের দাম কমায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তবে, নিম্ন আয়ের মানুষের বেশি ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে আলাদা হিসাব করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান তিনি। তবে পল্লী অঞ্চলের তুলনায় শহরগুলোতে খাবারের দাম বেশি কমেছে। নগরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ২৭ পয়েন্ট কমে ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে।

করোনা মহামারীপরবর্তী বিশ্বজুড়েই অর্থনৈতিক কার্যক্রম ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও গতিশীল হতে থাকে। ঠিক সেই সময়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশও নানামুখী চাপে পড়ে। আমদানি ব্যয় ও পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার ওপর বিশেষ করে ডলারের উপর চাপ তৈরি হয়। মূল্যস্ফীতির পারদ বেড়ে ৯ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছায়। হঠাৎ করে কমে আসে রেমিটেন্স। তবে গত অর্থবছরজুড়ে স্বস্তি দিয়েছে রফতানি আয়।

এদিকে, ঋণ চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের পাঠানো প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফকে বাংলাদেশ চিঠি দেয়ার এক সপ্তাহের মাথায় মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সংস্থাটির ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেনেবল ট্রাস্ট (আরএসটি)’ এ সম্মতির কথা জানায়।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, চলমান করোনা মহামারির মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে এরই মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। সরকার ইতিমধ্যে মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিয়েছে, মুদ্রা বিনিময় হার শিথিল করেছে, কম জরুরি পণ্য এবং জ্বালানি আমদানিতে সাময়িক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি কম জরুরি প্রকল্পে বরাদ্দ স্থগিত করে বেশি জরুরি খাতে ব্যবহারের নির্দেশনা জারি হয়েছে। তারপরও আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

আইএমএফ বলছে, বর্তমানে যে সংকট চলছে তা সাময়িকভাবে মোকাবেলা করতে পারলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো সঠিকভাবে সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে, যেসব সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের ক্ষেত্রে অর্থায়নে সহযোগিতা দিতেই তারা রেসিলিয়ান্স অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি ফান্ড গঠন করেছে এবং বাংলাদেশও এই তহবিল থেকে অর্থ পেতে পারে।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: