বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩

কক্সবাজারের নাজিরারটেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার মঞ্জু’সহ সাতজন ডাকাত র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার; আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার।

কক্সবাজারের নাজিরারটেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার মঞ্জু’সহ সাতজন ডাকাত র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার; আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

এম এস হান্নান স্টাফ রিপোর্টার
১। ‘‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’’ এই স্লোগান নিয়ে র‌্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জলদস্যু, ডাকাত, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জঙ্গী দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদকসহ দেশে বিরাজমান বিভিন্ন অপরাধ নির্মূলে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। কক্সবাজারের জেলে সম্প্রদায়ের অসংখ্য লোক বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠার ফলে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের জন্য রীতিমত আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিনিয়তই জলদস্যুরা জেলেদের মারধর করে জাল, মাছ ও নগদ অর্থ ইত্যাদি লুটপাট করে নিয়ে যায়। সেই সাথে জলদস্যুরা অনেক জেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও ক্ষেত্রবিশেষ জেলেদের খুন পর্যন্ত করে থাকে।

২। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের জলদস্যু চক্রকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে মাঠে নামে র‌্যাব-১৫ এবং একই সাথে বৃদ্ধি করা হয় র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী ও তৎপরতা। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে গোয়েন্দা সূত্রে র‌্যাব জানতে পারে যে, কক্সবাজার জেলার সদর থানাধীন পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডস্থ নাজিরারটেক মোস্তাকপাড়া বাজারের উত্তর পশ্চিম মাছ ঘাটের চরের মধ্যে জলদস্যুদের একটি দল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ সমবেত হয়ে সমুদ্রে ডাকাতি সংঘটনের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। উক্ত গোয়েন্দা তথ্যের প্রেক্ষিতে অদ্য ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ রাত অনুমান ০২.১০ ঘটিকার সময় র‌্যাব-১৫, কক্সবাজারের একটি চৌকস আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় জলদস্যু দলটি র‌্যাবের অভিযানিক দলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টাকালে কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার মঞ্জু’সহ চক্রের ০৭ জনকে র‌্যাব গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে ধৃত জলদস্যুদের হেফাজত হতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সর্বমোট ০৩টি দেশীয় তৈরী বন্দুক, ০৪ রাউন্ড কার্তুজ, ০৩ রাউন্ড এ্যামুনিশন, ০২টি কিরিচ, ০২টি সুইচ গিয়ার চাকু, ০২টি টর্চ লাইট এবং ০৭টি বাটন মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

৩। গ্রেফতারকৃত জলদস্যু দলের বিস্তারিত পরিচয় :

(১) মোঃ মঞ্জুর আলম @ মঞ্জু (৩৮), পিতা-মৃত বাহাদুর মিয়া, মাতা-কাঞ্চনি বেগম, সাং-সোনাদিয়া, ২নং ওয়ার্ড, কুতুবজোন ইউনিয়ন, থানা-মহেশখালী, জেলা-কক্সবাজার।
(২) মোঃ বাহার উদ্দিন বাহার @ মাহবুব (৩২), পিতা-আবু তাহের, মাতা-মনোয়ারা বেগম, সাং-ছনুয়া, ৪নং ওয়ার্ড, ছনুয়া ইউনিয়ন, থানা-বাঁশখালী, জেলা-চট্টগ্রাম।
(৩) মকছুদ আলম (৩২), পিতা-মৃত সামছুল আলম, মাতা-হাসিনা বেগম, সাং-কালুয়ার ডেইল, ৪নং ওয়ার্ড, আল আকবর ডেইল ইউনিয়ন, থানা-কুতুবদিয়া, জেলা-কক্সবাজার।
(৪) মোঃ তোফায়েল (২১), পিতা-মৃত সৈয়দুল করিম, মাতা-রোকেয়া বেগম, সাং-কাকপাড়া, ৫নং ওয়ার্ড, মগনামা ইউনিয়ন, থানা-পেকুয়া, জেলা-কক্সবাজার।
(৫) মোঃ দিদার (৩০), পিতা-বদিউল আলম, মাতা-বেবি আক্তার, সাং-পূর্ব মহাজের পাড়া, ৩নং ওয়ার্ড, বরইতলী ইউনিয়ন, থানা-চকরিয়া, জেলা-কক্সবাজার।
(৬) ইকবাল হোসেন (৩৫), পিতা-মৃত ইছহাক, মাতা-মৃত আশা খাতুন, সাং-উত্তর মাদরাসা (তেহমনি), ৫নং ওয়ার্ড, মাদরাসা ইউনিয়ন, থানা-হাটহাজারী, জেলা-চট্টগ্রাম।
(৭) মোহাম্মদ রাশেদ (২৭), পিতা-ইয়ার মোহাম্মদ, মাতা-আমেনা বেগম, সাং-উত্তর কুতুবদিয়া পাড়া, ১নং ওয়ার্ড, কক্সবাজার পৌরসভা, থানা-সদর, জেলা-কক্সবাজার।

৪। গ্রেফতারকৃত মোঃ মঞ্জুর আলম @ মঞ্জু একজন কুখ্যাত জলদস্যু সর্দার। কক্সবাজার অঞ্চলে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত জেলে সম্প্রদায় ও অন্যান্যদের নিকট আতংকের অপর নাম মঞ্জু ডাকাত। জলদস্যু দলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মঞ্জু ডাকাতের নেতৃত্বে আটককৃত জলদস্যু ডাকাত দলটি প্রায় ৮-১০ বছর যাবত জলদস্যুতাসহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। তারা প্রতি ১/২ সপ্তাহ পরপর নদী ও সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেদের অস্ত্র-শস্ত্রের ভীতি প্রদর্শনসহ ট্রলারে ডাকাতি করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জলদস্যু সর্দার মঞ্জু সরাসরি সমুদ্রে না গিয়েও জলদস্যুতার কাজে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে এবং তার পরিকল্পনা মোতাবেক ট্রলারে ডাকাতির ঘটনাগুলো সংঘঠিত হয়। তার অনুপস্থিতিতে চক্রের ২য় কমান্ড হিসেবে ডাকাত মাহাবুব জলদস্যু দলটির নেতৃত্ব দিয়ে থাকে বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, গত রাতে জলদস্যু দলটি একত্রে সমবেত হয়ে পরস্পর জ্ঞাতসারে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ডাকাতির পরিকল্পনায় বরাবরের মতো প্রধান ভূমিকায় ছিল এই মঞ্জু ডাকাত। সিডিএমএস যাচাইয়ান্তে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে কক্সবাজারের সদর ও মহেশখালী থানায় ০৯টির অধিক মামলা সংক্রান্তে তথ্য পাওয়া যায়।

৫। গ্রেফতারকৃত মোঃ বাহার উদ্দিন বাহার @ মাহবুব জলদস্যু ডাকাত দলের উপ-প্রধান, অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও সমুদ্রে ডাকাত দলের নেতৃত্ব দানকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে মকছুদ ডাকাত দলের জনবল সরবরাহকারী ও মোহাম্মদ রাশেদ জলদস্যু দলকে নৌকা সরবরাহ করে অপরাধ কার্যে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া তারা সবাই সমুদ্রে ডাকাতির কাজে সরাসরি অংশগ্রহণও করে। সিডিএমএস যাচাই করে জানা যায় যে, ডাকাত মাহবুব এর বিরুদ্ধে ০৩টি, মকছুদ আলম এর বিরুদ্ধে ০২টি মামলা রয়েছে।

৬। গ্রেফতারকৃত জলদস্যুদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: