মঙ্গলবার, মার্চ ১৯, ২০২৪

ডিসিদের যে ২৪ দফা নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক: সেবা নিতে আসা মানুষের সন্তুষ্টি অর্জন, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায়, গুজব রোধে তৎপর থাকাসহ জেলা প্রশাসকদের ২৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বার্ষিক সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন।

দুই বছর পর আজ জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বার্ষিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সম্মেলনের ব্যাপ্তি পাঁচ দিন থেকে কমিয়ে তিন দিন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধানের দেওয়া ২৪ দফা নির্দেশনা হচ্ছে—

১) করোনাভাইরাসজনিত সংকট মোকাবিলায় সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ মাঠপর্যায়ে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

২) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত উন্নয়ন ও সেবামূলক কার্যক্রমসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং এর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে।

৩) খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৪) সরকারি অফিসসমূহে সাধারণ মানুষ যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বিঘ্নে যথাযথ সেবা পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সেবাপ্রত্যাশীদের সন্তুষ্টি অর্জনই যেন হয় সরকারি কর্মচারীদের ব্রত।

৫) এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে তৎপরতা জোরদার করতে হবে।

৬) গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ, ভূমিহীনদের কৃষির জন্য খাসজমির বন্দোবস্তসহ সব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যেন প্রকৃত অসহায়, দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

৭) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের পাঠদান কার্যক্রমের মানোন্নয়নে উদ্যোগী হতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থায় অনলাইনে বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

৮) কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো যেন কার্যকর থাকে, তা প্রতিনিয়ত তত্ত্বাবধান করতে হবে এবং নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের মাঝে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়াতে হবে।

৯) শিশু-কিশোরদের শারীরিক-মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রতি এলাকায় সৃজনশীলতার চর্চা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও ক্রীড়াসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

১০) নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

১১) পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সংগতি রেখে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে উচ্চ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করতে হবে।

১২) জনসাধারণের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার, গুজব ইত্যাদি রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।

১৩) বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

১৪) মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করতে হবে।

১৫) নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাল্যবিবাহ, ইভ টিজিং, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য তৈরি ইত্যাদি অপরাধ রোধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।

১৬) বাজারে পণ্যের সরবরাহ মসৃণ রাখতে, কৃত্রিম সংকট রোধ ও দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

১৭) সরকারি জমি, নদী, বনভূমি, পাহাড়, প্রাকৃতিক জলাশয় প্রভৃতি রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে নতুন সরকারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণকে প্রাধান্য দিতে হবে; পরিকল্পিত নগরায়ণ ও বনায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

১৮) পর্যটনশিল্পের বিকাশ ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে হবে।

১৯) জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা এবং জেলাভিত্তিক বিখ্যাত পণ্যসমূহের প্রচার ও বিপণনে উদ্যোগী হতে হবে।

২০) জেলার সব সরকারি দপ্তরের কার্যক্রমসমূহ যথাযথভাবে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে আপনাদের ব্রতী হতে হবে।

২১) জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধি অর্থাৎ সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে কি না বা বাস্তবায়নও যথাযথভাবে হচ্ছে কি না, সেগুলোর সমন্বয় করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প যত্রতত্র যেন না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

২২) সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি—বেদে, জেলে, কৃষক, হিজড়া (ট্রান্সজেন্ডার), হরিজন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ যারা একেবারে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণি, তাদের সার্বিক উন্নয়ন, তাদের বাসস্থান এবং তাদের সুযোগসুবিধা সৃষ্টি করতে হবে।

২৩) মুক্তিযুদ্ধে যেসব অঞ্চলে গণহত্যার শিকার পরিবারদের বর্তমান অবস্থা জানা এবং তাদের যথাযথ সম্মানজনক জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

২৪) গণকবর সংরক্ষণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ইতিহাস জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: