বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র‌্যাবকে বাদ দিতে ১২ সংগঠনের চিঠি

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে মানবাধিকারবিষয়ক ১২টি আন্তর্জাতিক সংগঠন।

জাতিসংঘের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ পিয়ের ল্যাক্রোইক্সকে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশন্সের উচিত বাংলাদেশের এ আধাসামরিক বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

চিঠিতে সংগঠনগুলো র‌্যাবের ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়কে প্রামাণ্য হিসেবে তুলে ধরেছে। এইচআরডব্লিউ বলছে, প্রায় দুই মাস আগে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর জাতিসংঘের কাছে ‘প্রাইভেটলি’ পাঠানো হয়েছে ওই চিঠি। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো উত্তর দেয়নি জাতিসংঘের পিস কিপিং অপারেশন্স। এর আগে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের কাছে লেখা ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সংগঠনগুলো হলো- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপেয়ান্সেস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস : ওয়ার্ল্ড এলায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, এইচআরডব্লিউ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, দ্য অ্যাডভোকেটস ফর হিউম্যান রাইটস ও ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার।

রবার্ট কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি বলেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যদি শান্তিরক্ষীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করায় গুরুত্ব দেন, তা হলে তাকে নিশ্চিত করতে হবে যে নির্যাতনের প্রামাণ্য রেকর্ড আছে এমন র‌্যাবের মতো ইউনিটকে মোতায়েনের বাইরে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণ পরিষ্কার। এখন এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটি সীমারেখা টানার সময় এসেছে।

রবার্ট কেনেডি হিউম্যান রাইটসের রিপোর্টে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র সরকার র‌্যাবকে একটি বিদেশি ‘এনটিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যারা গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্টের অধীনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ও জড়িত। কিন্তু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের বিরুদ্ধে অস্বীকৃতি এবং প্রতিশোধমূলক আচরণ করেছে। গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা রিপোর্ট করেছেন, তাদের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন কর্মকর্তারা। তারা তাদের হুমকি দিচ্ছেন। তাদের মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছেন। সেসব বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, তাদের পরিবারের সদস্যকে গুম করা হয়নি বরং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছেন।

এদিকে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র‌্যাবকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবির বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, যারা র‌্যাব তৈরি করেছিল তারা এখন অপপ্রচার করছে। তিনি বলেন, র‌্যাব ভালো কাজ করলেও সেটা সামনে আসছে না। র‌্যাবের প্রতি অবিচার হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিনের অধিবেশন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জাতিসংঘে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমি সব সময় বলে আসছি, যদি পেছনের দিকে তাকান- র‌্যাব কখন তৈরি হয়েছিল। যারা র‌্যাব তৈরি করেছিল, এখন তারাই আবার র‌্যাবকে অপছন্দ করছে, নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। র‌্যাব যে ভালো কাজ করছে, সেগুলো তারা তুলে ধরছেন না। র‌্যাব যে মাদকের বিরুদ্ধে, ভেজাল দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে, দস্যুমুক্ত করল, চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে, তারা সব সময় জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের জন্য কাজ করছে, সে কথাগুলো তারা কখনো তুলে ধরেন না। তারা নানা ধরনের মানবাধিকারের কথা বলেন। আমরা তো চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এমন কোনো দেশ নেই যেখানে এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে না। পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ যদি অস্ত্র তুলে কথা বলে, পুলিশ সদস্যরা তখন নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে না। তখনই এসব ফায়ারিংয়ের ঘটনা ঘটে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সবকিছুই যদি এলিট ফোর্স র‌্যাবের ঘাড়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে আমি মনে করি এটা তাদের প্রতি অবিচার হচ্ছে। তা হলে র‌্যাব রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে কিনা এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, আপনারাই বিচার করবেন, আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: