শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

দাকোপে সুন্দরবন ও সংশিষ্ট জলজ বাস্ততন্ত্রে দুষণ প্রতিরোধ ও বিশমুক্ত মাছ ধরা বিষয়ে মানব বন্ধন

দাকোপে সুন্দরবন ও সংশিষ্ট জলজ বাস্ততন্ত্রে দুষণ প্রতিরোধ ও বিশমুক্ত মাছ ধরা বিষয়ে মানব বন্ধন

স্বপন কুমার রায় খুলনা ব্যুরো প্রধান
খুলনার দাকোপের কৈলাশগজ্ঞ ইউনিয়নে সুন্দরবন সংলগ্ন বুড়ির ডাবুর এলাকায় সুন্দরবন ও সংশিষ্ট জলজ বাস্ততন্ত্রে দূষণ প্রতিরোধ ও বিশ মুক্ত মাছ ধরা বিষয়ে এক মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রিহ্যাবিলাইটেশ ইমপ্লয়মোন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট ফরদি ইয়ুথস (রেডি) এর বাস্তবায়নে আরণ্যক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগীতায় ১০ জুন সোমবার সকাল ১০ টায় এই মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসময় রেডির সহকারি প্রকাল্প ব্যবস্হাপক শেখ মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্হিত ছিলেন বনবিভাগের ঢাংমারী স্টেশন এর অধীন লাউডোব টহল ফাড়ীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃআলাউদ্দিন মোল্লা রেডির নির্বাহী পরিচালক প্রনয় বাড়েই,,সংশিষ্ঠ প্রকল্প ব্যাবস্হাপক শেখ মাসুম, সহকারী প্রকল্প ব্যাবস্হাপক সমিক্ষা
রায়,বনজীবি,মৎস্যজীবি জেটিবোর্ড চালক,টুনিষ্ট এজেন্সির প্রতিনিধি,পরিবেশ কর্মি,গণমাধ্যম কর্মি
স্হানীয় নেতৃবৃন্দ গণমান্য ব্যক্তি বর্গ, ভিলেজ রেসপন্স টিম,ডলপিন কনজারভিষন টিম,, এনজিও কর্মি সহ সমাজের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ মানব বন্ধনে অংশ গ্রহণ করেন।
এসময় মানববন্দনের সঞ্চালক শেখ মারুফ হোসেন বলেন, সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যনগ্রোভ এলাকা। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এই বন পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইকোসিস্টেম। প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলের প্রতিরক্ষা ঢাল হিসাবেো কাজ করে আসছে সুন্দরবন। ‍বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্টি হওয়া যেকোন ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে এই সুন্দরবন। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল।
প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটারের বেশি যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগ। সুন্দরবনের তিনভাগের প্রায় একভাগ জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে ১৩টি বড় নদ-নদীসহ ৪৫০টির মতো খাল। এসব নদী-খালে অনেক জেলে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করে যা সুন্দরবনের প্রাণ-বৈচিত্রের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বিষ দিয়ে মাছ শিকার। এ ছাড়া বিষ প্রয়োগকৃত পানি পান করে বাঘ, হরিণসহ বনের নানা প্রাণীও বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এইসব অসাধু জেলেদের জন্য সুন্দরবনের শুধু মাছ নয়, মূল্যবান বনজ ও মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে।
বিষদিয়ে মাছ শিকারের স্বাস্থ্যঝুঁকি, পরিবেশগত সংকট ও করনীয় সম্পকেও এসময় তিনি আলোচনা করেন।এসময় বক্তরা বলেন, প্লাস্টিক দূষণ একটি অভিশাপ। প্লাস্টিকের বর্জ্য জলবাযু পরিববর্তনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য নষ্ট করে জীব-বৈচিত্রের ক্ষতি করে চলেছে। প্লস্টিক দূষণ সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল, খাদ্র সংগ্রহের স্থান ও উদ্ভিদের খাদ্য গ্রহণের পথে বাধার সৃষ্টি করছে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জের জন্য। প্লাস্টিকের দ্রব্যগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে মাইক্রো-প্লাস্টিকে পরিনত হচ্ছে যা সুন্দরবনের মাছ ও সমুদ্রের মাছের মাধ্যমে আবার মানব দেহে ফিরে আসছে। সুন্দরবনে বিভিন্ন জলজ প্রাণীর গায়ে পলিথিন জড়িয়ে যাওয়ায় তারা মারা যাচ্ছে।
সুন্দরবরে ভ্রমণ কিংবা জিবিকা নির্বাহের জন্য বনের মধ্যে প্লাস্টিক সামগ্রী ফেলে আসছে। সুন্দরবনের যেখানে সেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলে নির্দষ্ট স্থানে ফেলতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। জেটি বোর্ড মালিক সমিতি, বোর্ড চালকরা তাদের ভ্রমণশেষে প্লাস্টিক বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে বুঝে দিলে সুন্দরবনে প্লাস্টিক দুষণ কমানো যাবে।

এসময় বক্তরা বলেন, সুন্দরবন আমাদের সকলের আসুন আমরা সকলে সুন্দরবনের খাল ও নদী থেকে প্লাস্টিক সামগ্রী অপসারন করি ও অন্যকে উৎসাহিত করি। আসুন সুন্দরবনের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করি ও অন্যকে উৎসাহিত করি। সুন্দরবন ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকবো। সুন্দরবনের পরিবেশ, জীব-বৈচিত্র রক্ষায় এগিয়ে আসি।,বর্ক্তারা আরো বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় শিল্প কারখানা স্হাপন বনের মধ্যে ভারী নৌযান চলাচল,পাচারের উদ্দেশ্যে বনের মধ্যে বন্যপ্রাণী হত্যা, বিশ দিয়ে মাছ শিকারএবং নিয়ণ্ত্রণহীন পর্যাটনের কারণে ঘটছে দূষণ।এর নৈতিবাচক প্রভাব পড়ছে বনের গাছপালা,অন্য বন ও জলজ প্রাণীর ওপর। এ ছাড়াঝড়,জলোচ্ছাস এর পভাব,সুন্দরী ও গেওয়াগাছের আগামরা রোগ ও সুন্দরবনের ক্ষতির কারণ। সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও উজান থেকে মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় বনের পানি ও মাটিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। বেড়েছে নদীভাঙন ও পলি পড়ার হার। তার ওপর মানুষের অবিবেচকসুলভ কর্মকাণ্ডে সুন্দরবনে দূষণ আরও বেড়েছে। সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করলেও সেই এলাকার মধ্যে অর্ধশতাধিক ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেখা যায়, খাদ্য বিভাগের বিশাল খাদ্য গুদাম, সিমেন্ট কারখানা, এলপি গ্যাস প্লান্ট, অয়েল রিফাইনারি, বিটুমিন, সি ফুড প্রসেসিং ফ্যাক্টরিসহ বহু কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পশুর নদে, যা বনের মাটি ও নদীতে মিশছে।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: