সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪

বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ সাতক্ষীরা পৌরবাসী

সাতক্ষীরা শহরে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বেওয়ারিশ কুকুর। প্রতিটি মোড়ে ও পাড়া মহল্লায় দল বেঁধে ওঁৎপেতে থাকে এসব কুকুর। সুযোগ পেলেই পথচারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা।

রাতে রাস্তায় চলতে গিয়ে কুকুরের সামনে পড়ে পথচারীদের নাস্তানাবুদ হতে হয়। সাতক্ষীরায় বেওয়ারিশ কুকুরের আতঙ্কে অসহায় সাধারণ মানুষ। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরুকরে সকলে এখন কুকুর আতঙ্কে ভুগছে। এসব বেওয়ারিশ কুকুর সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দল বেঁধে শহরের অলি গলি দাপিয়ে বেড়ালেও দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ করেন শহরবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যাতায়াতের পথে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ৮-১০টি কুকুর সংঘবদ্ধভাবে রাস্তার মাঝে, বসে, শুয়ে থাকাসহ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে, পথচারীকে একা পেলে তাদের ঘেউ ঘেউ মিছিলসহ আক্রমণ করে। অনেক স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী ভয়ে একা স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পথচারীরা একা রাতে এসব রাস্তা দিয়ে পথ চলতে ভয় পায়।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগে পৌরসভায় নিধনের মাধ্যমে বেওয়ারিশ কুকুর বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা হতো। কিন্তু এখন নিধনের মাধ্যমে কুকুর নিয়ন্ত্রণ নয়, ভ্যাকসিন ব্যবহার করে কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণের নির্দেশ রয়েছে। ভ্যাকসিনের অভাব এবং কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় লাগামহীনভাবে বাড়ছে বেওয়ারিশ কুকুর। এটা শহরবাসীর জন্য শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পৌরসভার কূল রাখি না শ্যাম রাখি অবস্থা। শীতের মধ্যেও কুকুরের দাপট এখন অনেকগুণ বেড়ে গেছে। আর কুকুরের বাচ্চাগুলো এরই মধ্যে বড় হয়ে ওঠছে। তারাও ভয়াবহ হয়ে ওঠছে। এটা পথচারীদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। এখনই কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না নেয়া হলে সাধারণ মানুষের জন্য রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে ওঠবে। শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে সরকারি কলেজ মোড়, শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক থেকে ডেনাইট কলেজ মোড় ও কুখরালীসহ বিভিন্ন স্থানে এসব কুকুরের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। স্কুলছাত্রী সুমা খাতুন বলেন, সকালবেলা একাই স্কুল বা প্রাইভেট যেতে খুব ভয় লাগে এছাড়াও মাঝে মাঝে কুকুরের দল ধাওয়াও করে। মুনজিতপুর এলাকার বাসিন্দা কহিনুর ইসলাম বলেন, রাস্তায় সারা দিনই ১৫ থেকে ২০টি বেওয়ারিশ কুকুর ছোটাছুটি করে কুকুরের উৎপাতে আমার সন্তানেরা স্কুল যেতে ভয় পায়, রাতে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে ঘুমানো দায়। রেজিস্ট্রি অফিস এলাকার আসমা খাতুন জানান, কুকুরের ভয়ে রাতে একা বাড়িতে আসা যায় না এছাড়াও দিনের বেলাও মেয়েকে একা স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি। ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান জানান, রাতে বাসায় ফেরার সময় বেওয়ারিশ কুকুর পথ রোধ করে ধরে একারণে একজন সঙ্গীর অপেক্ষায় থাকতে হয়, নয়তো সামান্য রাস্তার জন্য ৩০-৪০ টাকায় ইজিবাইক ভাড়া গুনতে হয়।

সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উচ্চ আদালতে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে ২০১০ সাল থেকে। এরপর থেকেই বেওয়ারিশ কুকুর বেড়েই চলেছে। ওই বছরই সর্বশেষ শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে বেওয়ারিস কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। এরপর থেকেই বন্ধ এ কার্যক্রম।

তবে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. এ বি এম আব্দুর রউফ জানান, জেলার বিভিন্ন প্র্রান্ত থেকে বেওয়ারিশ কুকুর বা পথ কুকুরের দৌরাত্ম্যের খবর শুনছি। জলাতং প্রতিরোধে ভ্যাকসিন দেওয়া এই কাজ প্রাণি সম্পদ বিভাগ করে না, এই কাজ করে পৌরসভা। আমাদেরকে জানালে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবো। জলাতঙ্ক প্রতিরোধ ও নিরাপদ স্বাস্থ্য রক্ষায় মালিকদের কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়ার তাগিদ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অফিস।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা: মো: হুসাইন শাফায়াত পত্রদূতকে বলেন, সিভিল সার্জন অফিসের (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি) ইপিআই স্টোর থেকে কুকুরে কামড়ানো ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কুকুরে কামড়ানো আহতরা যাতে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে পারে সে জন্য সরকারিভাবে ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: