সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪

জেলা প:প: উপ-পরিচালক রওশান-আরা জামানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

সোমবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দুপুর একটার সময় জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সচেতন নাগরিক কমিটির আয়োজনে সাতক্ষীরায় জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক রওশান-আরা জামানের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রায় ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপিতে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়-প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ও জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা।

লিখিত স্মারকলিপি ও বক্তাদের বক্তব্যে জানা যায়, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক রওশান আরা-জামান ও তার অধিনস্থ আশাশুনি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ও আশাশুনি মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) ডা: পলাশ দত্ত তাদের যৌথ পরিকল্পনায় দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ সাতক্ষীরা জেলাকে জিম্মি করে বিভিন্নভাবে অসৎ উপায়ে অর্থ বাণিজ্য করছেন। ইমপ্রেস ফান্ড, নির্মাণ ও মালামাল ক্রয় না করে অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। বক্তারা আরও বলেন, উপ পরিচালক রওশান-আরা জামান প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হাওয়া সত্ত্বেও তার নিজ জেলায় অদৃশ্য শক্তির বলে দীর্ঘ ১০-১২ বছর যাবৎ চাকরি করে আসছেন। তার সরকারি অফিসকে নিজের ব্যক্তিগত অফিসের মতো ব্যবহার করে জেলাব্যাপি সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধ অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে বদলী ও নি¤œ পদের কর্মচারিদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা তার প্রতিদিনের কাজ। উপ-পরিচালক রওশান আরা জামানের বিশ^স্ত পোষ্য অবৈধ পথের একনিষ্ঠ সহায়ক হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন আশাশুনির পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা জাহাঙ্গীর আলম ও মেডিকেল অফিসার ডা: পলাশ দত্ত। তারা তিনে মিলে সাতক্ষীরা জেলার সদ্য নির্মাণ হাওয়া নি¤œমানের চাম্পাফুল মা ও শিশু স্বাস্থ কেন্দ্র, দরগাহপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ভোমরা জনস্বাস্থ্য মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রসহ প্রতেকটিতে ব্যয় হয় ৪ কোটি ২ লক্ষ টাকা করে মোট ৩টি ভবন বাবদ ১২কোটি ৬৬লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও অর্থ আত্মসাতের অবস্থান কঠিন আকার হওয়ায় সামান্য সময়ে ভবনগুলি ঝুকিপূর্ণ। সেবা দান ও সেবা গ্রহণের অনুপযোগী হয়েছে অল্প সময়ে। এছাড়া সংস্কারের নামে অর্থ লুটের নৈরাজ্য চলছে বলে দাবি করেন বক্তারা। সদর উপজেলার সদ্য সংস্কার হওয়া ভবনগুলির মাঝে আলিপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, বল্লি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, কুশখালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, দেবহাটায় নওয়াপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, পারুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, আশাশুনি আনুলিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, কাদাকাটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, বুধহাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, প্রাতাপনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, কলোরোয়া কেরালকাতা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, হেলাতলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, তালা নগরঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, খলিশখালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, কালিগঞ্জ মৌতলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, কালিগঞ্জ ও শ্যমনগরের বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রসহ প্রতেকটি সেক্টরে নামকা ওয়াস্তে কোন রকম রংঝং করে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদারের মাধ্যমে তারা তিন কর্মকর্তা ভাগের অর্থ আদায় করে দায়িত্ব ও কর্তব্যরত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ইনচার্জের নিকট থেকে হুকুম জারি করে স্বাক্ষর করিয়ে নেন বলে বক্তারা লিখিত ও বক্তব্যে বলেন। কাজ বুঝে নেওয়ার সুযোগ নাকি ওই তিন অফিসার দেননা। প্রত্যেকটি সেন্টারে সংস্কার ও রংচং ব্যয় বরাদ্ধ ১১ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা থাকলেও প্রায় ৫ ভাগের ৪ ভাগ আত্মসাত করে, যা সরজমিনে তদন্তকালে প্রমান পাওয়া যাবে বলে দাবি বক্তাদের।
উপ-পরিচালকের সঙ্গে ঘনিষ্টতা থাকার কারণে আশাশুনি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আলম একই স্টেশনে সাত বছর যাবৎ অবৈধ ক্ষমতা বলে কর্মরত আছেন ও আশাশুনিতে তার পাপের নৈরাজ্য তৈরি করেছেন বলে দাবি করেন মানববন্ধনে। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আলম সেখানে নারী কেলেঙ্কারী অর্থ বাণিজ্য অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার অবৈধ ক্ষমতার ভয়ে মুখ খোলেনা কেউ। যদি কেউ তার কোনো অপরাধের বিষয়ে কাউকে জানায় তাহলে তাকে তৎক্ষণাতভাবে উপ-পরিচালকের মাধ্যমে পানিসমেন্টর ব্যবস্থা করেন জাহাঙ্গির আলম। জাহাঙ্গির আলম অতিরিক্ত দায়িত্বে কলোরোয়ায় থাকলেও তাকে আশাশুনি থেকে মুঠোফোনে কথা বললে কলারোয়ায় আছি, একই সময়ে কলারোয়া থেকে কথা বললে বলেন আশাশুনিতে আছি। অর্থাৎ তিনি আদৌ মাসে কয়দিন অফিস করেন তা নিজেই জানেননা বলে বক্তারা অভিযোগ করেন মানববন্ধনে। তিনি তার অধিনস্থ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সুন্দরী মহিলাদের নিয়ে অফিসে ও বাইরে সময় কাটান বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন তারা। আবার তার পছন্দের কেউ তার কথায় রজি না হলে তাকে নাকানি চুবানি খেতে হয়। এরপরও বাধ্য না হলে শাস্তি স্বরূপ অন্যত্র বদলি করা হয়।
এছাড়া ডা: পলাশ দত্ত উপ-পরিচালক রওশনারা জামানের দুর্নীতির সহায়ক হওয়ায় সে সপ্তহে কোনো দিন অফিস না করলেও খাতা কলমে ৫দিন হাজিরা থাকে। অফিস চলাকালিন সময়ে তাকে প্রতিদিন সারাদিন নাহার ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারে অবৈধভাবে রুগি দেখা ও আল্ট্রাসনো করা ও আবার অফিস চলাকালিন সময়ে ডা: পলশ দত্তর পছন্দের অধিনস্থ কোনো নারীকে কল করলে অফিস বাদ দিয়ে সাক্ষীরায় এসে তাকে সময় দিতে হয় বলে বক্তারা অভিযোগ করেন। এছাড়া জাহাঙ্গির আলম ও ডা: পলাশ দত্তের ক্রয় দুর্নীতিতে তারা অফিসে যন্ত্রাংশ ক্রয় না করে লক্ষ লক্ষ টাকা খাতা কলমে দেখিয়ে দিয়ে তাদের গডফাদার উপ-পরিচালক রওশনারা জামানের মাধ্যমে হালাল করে নেন। অল্প দিনের মধ্যে তাদের তিনের স্বনামে বেনামে ব্যাংক ব্যালেন্সসহ বিলাশবহুল বাড়ি ও জমিজমা বানিয়েছে। দীর্ঘ বছর যাবৎ অবৈধ্য ক্ষমতা ও পেশিশক্তি বলে তারা সাতক্ষীরা জেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারিদের জিম্মি করে রামরাজত্ব কায়েম করেছে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলায় উপ-পরিচরলকের কার্যালয় কোটি টাকা ভবন নামের বিল্ডিংয়ে পরষ্পর যোগসাজসে পর্যাপ্ত পরিমানে অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক গাজী সাহাজানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন শরিফা খাতুন, আকলিমা খাতুন, মর্জিনা বেগমসহ অনেকে।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: