শনিবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪

সংসার চালাতে ছুঁটছে বেনাপোলের জায়েদা বেগম

স্টাফ রিপোর্টার: বাবা–মা মারা যাওয়ায় মাত্র ১২ বছর বয়সেই বিয়ে হয় জায়েদা বেগমের। কিন্তু যৌতুক না পেয়ে স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। দুই বছর পর আবার বিয়ে হয় তাঁর। তবে কপালে বেশি দিন সুখ সয়নি। ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান স্বামী। এরপর সংসার চালাতে জায়েদা বেনাপোল বন্দর এলাকায় গিয়ে জড়িয়ে পড়েন কালোবাজারিতে।

একটু সুখে থাকতে আবারও বিয়ে করেন জায়েদা। দার–দেনা করে বিদেশে পাঠানো সেই স্বামী দেশে ফিরে বিচ্ছেদ ঘটান তাঁদের সম্পর্কের। শেষমেশ জীবনের বাকি পথ চলতে কালোবাজারির অন্ধকার জগত ছেড়ে নেমে পড়েন অটোরিকশা নিয়ে। এই অটোরিকশার স্টিয়ারিং তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সাফল্য আর আলোর পথে।

জায়েদা বেগমের ইজিবাইকের চাকার সঙ্গে ঘুরছে ‘স্বচ্ছলতার চাকা’। কালোবাজারীর স্থলে তাঁকে এখন সবাই সম্মান করে ডাকেন ‘জায়েদা ড্রাইভার’ বলে। তিনি যশোর জেলার ঝিকরগাছা ও মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইজিবাইক চালিয়ে বেড়ান। জেলাতে তিনিই একমাত্র নারী ইজিবাইকচালক। জায়েদা বেগম নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী হিসেবে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায় তিনবার জয়িতা পুরষ্কার পেয়েছেন।

জায়েদা বেগমের ১৯৬৭ সালে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সালামতপুর গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম। বারবার দুর্ঘটনার শিকার জায়েদা নিরুপায় হয়ে মনস্থির করেন, ইজিবাইক চালাবেন। একটি সমিতির সদস্য হয়ে সেখান থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এক লাখ ষাট হাজার টাকা দিয়ে একটি ইজিবাইক কেনেন। ২০১৭ সালে জুন মাসের দিকে সেই ইজিবাইকের স্টিয়ারিং ধরে রাস্তায় নামেন জায়েদা বেগম। ইজিবাইকের স্টিয়ারিংয়ে দেওয়া হাত আর কালোবাজারি কাজে লাগাননি তিনি। ফিরে আসেন অন্ধকার থেকে আলোর পথে। গত পাঁচ বছরে ইজিবাইকের চাকার সঙ্গে তাঁর ‘স্বচ্ছলতার চাকাও’ ঘুরেছে।

জায়েদা বেগম বলেন, ‘আমি এখন অনেক ভালো আছি। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ শ টাকা আয় হয়। পাঁচ বছরের আয়ের টাকায় চার শতক জমিও কিনেছি। মাথা গোঁজার জন্য একটি ঘর তৈরির কাজ শুরু করেছি।’

তবে জায়েদা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি নারী হয়ে ইজিবাইক চালাই বলে অনেকে বিশেষ করে পুরুষ চালকেরা (গাড়ি) নানা কটু কথা বলেন। হেনস্থা হতে হয় পুরুষ চালকদের কাছে। তবে যে যাই বলুক আর কোনো অন্ধকার জগতে ফিরে যেতে চাই না। অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এই পথ চলতে। এই ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’

যশোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরী চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এ জেলায় একমাত্র নারী ইজিবাইক চালক জায়েদা বেগম। তিনি আগে কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখান থেকে ইজিবাইক চালক হওয়া এটা একটা দৃষ্টান্ত। তাঁকে সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব।’



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: