বুধবার, মে ১৫, ২০২৪

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান  

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান  

মিরু হাসান, স্টাফ রিপোর্টার

নওগাঁয় নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতের দাবিতে নওগাঁয় চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ওই শিক্ষার্থী ঘণ্টাব্যাপী শহরের তাজের মোড় ও বড় ব্রিজের উপর সড়কের মাঝখনে চোখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান করেন পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া।

ছোঁয়া নওগাঁ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছোঁয়ার হাতে থাকা পোষ্টারে লিখা ছিল “সড়কে নিরাপত্তা চাই, বাঁচার মত বাঁচতে চাই, দূর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন প্রয়োগ চাই”। এসময় স্থানীয় পথচারিরাও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান।

ছোঁয়ার কর্মসূচি সম্পর্কে জুলফিকার রহমান নামে এক পথচারী বলেন, আমরা সড়কে কেউ নিরাপদ নয়। বাসা থেকে বের হলে সুস্থভাবে নিরাপদে ফিরতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এক শিশু শিক্ষার্থীর এমন উদ্যোগ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। সবারই উচিত নিরাপদ সড়কের দাবিতে সোচ্চার হওয়া।

আরেক পথচারী বলেন, প্রতিদিনই সড়কে তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। তাই তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বাচ্চাটির এমন দাবি খুবই যৌক্তিক। আমরা তার দাবিকে সমর্থন করছি। তাকে দেখে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে ফাতেমা আফরিন ছোঁয়া বললো, টেলিভিশন-পত্রিকাতে প্রতিদিন যে মৃত্যুর খবর দেখি তার অধিকাংশই সড়ক দুর্ঘটনাজনিত। রাস্তায় বের হলে আবার বাড়িতে মা-বাবার কাছে ফিরতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রতিদিন এত মৃত্যুর খবর দেখে খুবই কষ্ট পাই, ভয়ও লাগে।সে আরও বলে, বেশ কয়েকদিন আগে নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এক দম্পতি। আর বেঁচে যায় তাদের পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু। একবার ভাবুন, সেই শিশুটির কী হবে? শিশুটি সারাজীবনের জন্য বাবা-মার আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল। আমি চাই নিরাপদ সড়ক। নিরাপদে সড়কে চলাফেরা করতে চাই। সরকারের কাছে আবেদন নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

 

ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার বাবা সঙ্গীত শিল্পী খাদেমুল ইসলাম ক্যাপ্টেন বলেন, গত ১৮এপ্রিল সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা ব্রিজ এলাকায় জনপ্রিয় গানের গীতিকার, সুরকার শিল্পী মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান মারা যায় সড়ক দূর্ঘটনায়। পাগল হাসান আমার সহকর্মী ও বন্ধু ছিল। এর আগে ১৭এপ্রিল নওগাঁ শহরের ইয়াদ আলীর মোড়ে

সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় এনামুল হক ও বৃষ্টি আক্তার নামের দম্পত্তি। আর বেঁচে যায় তাদের ৫বছরের শিশু জুনাইদ ইসলাম। এই ঘটনাগুলো আমার মেয়ের মনে মারাত্বকভাবে দাগ কেটে যায়। মেয়েটি আমার এত মৃত্যুর খবর প্রতিদিন শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারছেনা। যার কারনেই সে বলেছে, আব্বু আমি নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় দাঁড়াতে চাই। মেয়ের এই মহৎ ও যৌক্তিক চাওয়াকে না বলতে পারিনি। যার কারনে পুরো সমর্থন জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আজ আমার ছোট্ট মেয়েটা একাই যেভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবি করছে ঠিক সেভাবে দেশের সবাই যদি এমন করে সচেতন হতো ও দাবিগুলো তুলে ধরতো তবে, প্রতিদিন এমন প্রাণহানির মত ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে আসতো। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, সবাই যেন ট্রাফিক আইন মেনে চলে সেই উদ্যোগের বাস্তবায়ন চাই। আর তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগন, যানবাহন চালক ও মালিকদের একসাথে কাজ করার আহব্বান জানাচ্ছি।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা ) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি এ এস এম রায়হান আলম বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। পাশা-পাশি যান বাহন চালক ও মালিকদের সচেতনও করছি। শিক্ষার্থী ফাতেমা আফরিন ছোঁয়ার এমন উদ্যোগ আমাদের অনেক মুগ্ধ করেছে। এমন দাবি ও সচেতনতাবোধ যদি সবার মাঝে জাগ্রত হতো তবে সড়ক দূর্ঘটনা অনেক কমিয়ে নিয়ে আসা সম্বব বলে মনে করি। তার এমন উদ্যোগ ও দাবিকে স্বাধুবাদ জানাই।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: