রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪

বিশৃঙ্খল সড়ক, বেড়েছে যানজট : মামলাতেই বেশি আগ্রহ পুলিশের

বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর সচল ব্যস্ত নগরী ঢাকা। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও আগের তুলনায় প্রতিদিন তীব্র যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ওয়াসা, তিতাস ও সিটি করপোরেশনের মতো বিভিন্ন সেবা সংস্থার নিত্য খোঁড়াখুঁড়িতে যানজট ছড়িয়ে পড়ছে অলিগলিতেও।

ঊর্ধ্বতনদের বক্তব্যে পরিকল্পনার কথা বলা হলেও সিগন্যালগুলোতে বন্ধ হয়নি ট্রাফিক পুলিশের হাতের ব্যবহার। অবৈধ পার্কিং, প্রটোকল বেষ্টিত ভিআইপিদের উল্টো চলার রীতি, গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা— সবমিলিয়ে সাধারণের ক্ষোভ স্পষ্ট। নগরজুড়ে শৃঙ্খলাহীন ট্রাফিক ব্যবস্থায় যানজট বৃদ্ধি পেলেও ‘নিয়ন্ত্রক’ সংস্থা ট্রাফিক পুলিশের আগ্রহ যেন মামলাতেই।

গত তিন বছরে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাজে বাধা দেওয়ায় রাজধানীতে ২০ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে ১৫৮ কোটি ৪৮ লাখ ছয় হাজার ৮০৯ টাকা
ট্রাফিক পুলিশ বলছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৫৬২টি মামলা হয়েছে। মামলার বিপরীতে জরিমানা আদায় হয়েছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৭ টাকা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাজে বাধা দেওয়ায় রাজধানীতে ২০ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৫টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে ১৫৮ কোটি ৪৮ লাখ ছয় হাজার ৮০৯ টাকা।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও কাজের কাজ তেমন হচ্ছে না। উল্টো ভোগান্তি আগের চেয়ে বেড়েছে। ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে সাধারণের মনে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মূল সড়কে বেড়েছে অবৈধ স্থাপনা। সঙ্গে আছে অবৈধ পার্কিং, যা মূল সড়কের অনেকটাই দখলে রেখেছে। যদিও সিগন্যালগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশদের। যানজট নিরসনে নয়, মামলা দিতেই ব্যস্ত থাকেন তারা।সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও কাজের কাজ তেমন হচ্ছে না। উল্টো ভোগান্তি আগের চেয়ে বেড়েছে। ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে সাধারণের মনে

তবে, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণজনিত লকডাউন উঠে যাওয়ার পর রাজধানীতে গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। মূল সড়ক ছাড়াও সংযোগ সড়ক, অলিগলিতেও চলছে হরহামেশা খোঁড়াখুঁড়ি। রয়েছে ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনভিজ্ঞ ও মেয়াদবিহীন লাইসেন্সের চালক সবাই যেন নেমে পড়েছে সড়কে। এসব কারণে প্রসিকিউশন বা মামলার সংখ্যা বাড়ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাত লাখ ছয় হাজার ৪১৩টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাত লাখ ৫০ হাজার ৭২২টি যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু ও নবায়ন করেছে বিআরটিএ। বাকি যানবাহনের নবায়ন হয়নি। অথচ ঢাকায় চলাচল করছে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৬টি যানবাহন বৈধের চেয়ে অবৈধ যানবাহন বেশি, অদক্ষ চালকও
সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কারিগরি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষ চালক সৃষ্টি এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। প্রতিষ্ঠালগ্নে (১৯৮৭ সাল) বিআরটিএ কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে তা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫৪৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকায়। ১৯৬ গুণ রাজস্ব বাড়লেও সড়কের অবস্থা দিন দিন খারাপ হয়েছে। অবৈধ, ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহনের সংখ্যা তো কমেনি উল্টো তা বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কে।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো মোটরযান সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে না। যেসব ব্যক্তিগত মোটরযানের আসন সংখ্যা আট (চালকসহ) সেসব মোটরযান তৈরির সালসহ পাঁচ বছর ফিটনেস অব্যাহতি পেয়ে থাকে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর ফিটনেস নবায়নের নিয়ম।

রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই কম-বেশি চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়িতে মূল সড়ক ও অলিগলিসহ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। যার বড় প্রভাব পড়ছে যান চলাচলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাত লাখ ছয় হাজার ৪১৩টি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাত লাখ ৫০ হাজার ৭২২টি যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট ইস্যু ও নবায়ন করেছে বিআরটিএ। বাকি যানবাহনের নবায়ন হয়নি। এগুলো অবৈধভাবে রাজধানীর সড়কগুলো ব্যবহার করছে।

বিআরটিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন হওয়া মোটরযানের সংখ্যা ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৪৪টি। এর মধ্যে ঢাকায় চলাচল করে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৬টি যানবাহন। যা সমগ্র বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন হওয়া মোট মোটরযানের ৩৫.৫৯ শতাংশ।

বাংলাদেশি ভিআইপিদের সাধারণ নিয়মেই চলার নিয়ম। সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে কোনো ভিআইপি সড়কে চলাচল করতে পারেন না। মন্ত্রী পদমর্যাদার কেউ সড়কে নামলে পুলিশি নিরাপত্তা পেতে পারেন, চলাচলে বিশেষ সুবিধা নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যত্যয় ঘটে
নাম প্রকাশ না করে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
সারাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী মোটরযানচালকের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ১৭৪। অর্থাৎ যানবাহনের চেয়ে দক্ষ চালকের সংখ্যা কম। এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লাখ ১৩ হাজার ৭৭০ জন। বিআরটিএ’র পরিসংখ্যানের বাইরে অন্তত ২৭ লাখ যানবাহন চলে শুধু রাজধানীতেই।

চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৪৪ হাজার ৬১৬টি ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা হয়েছে। বিতরণ করা হয়েছে ২২ লাখ ৯৪ হাজার ২১২টি। দিনদিন যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি সড়ক ও পার্কিং সুবিধা। উল্টো উন্নয়ন ও সেবার নামে বছরজুড়ে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে মূল সড়কও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। আন্ডারগ্রাউন্ড (ভূগর্ভস্থ) পার্কিং রাখার শর্তে সম্প্রতি ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হলেও সেভাবে আলোর মুখ দেখেনি নতুন এ ব্যবস্থা। সড়কে যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংও কমেনি। রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণও এটি— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্রাফিক পুলিশ প্রথমে মানুষকে সাবধান করে। সচেতনতার কথা বলে। কাউন্সিলিং করে। একই ঘটনা যখন বার বার ঘটে তখন পুলিশ মামলা দেয়। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করলে মামলা তো হবেই। আর মামলা বা প্রসিকিউশনের যে প্রক্রিয়া সেটা তো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোরই অংশ

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। কোথাও মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে; কোথাও বিদ্যুৎলাইনের নির্মাণকাজ। মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ঝুলন্ত তার, কোথাও পয়ঃনিষ্কাশনের লাইন, আবার কোথাও চলছে ওয়াসার পানির লাইনের সংস্কার।

দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর প্রায় সব এলাকাতেই কম-বেশি চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়িতে মূল সড়ক ও অলিগলিসহ প্রায় ৭০০ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খারাপ। যার বড় প্রভাব পড়ছে যান চলাচলে। দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের। এর বড় উদাহরণ- তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, বনশ্রী, গুলশানের কিছু অংশ, মিরপুর, পল্লবী, মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এলাকা। উত্তরার মূল সড়ক যেন চেনাই দায়। উন্নয়নযজ্ঞে নাভিশ্বাস অবস্থা অত্র এলাকার মানুষের। ফার্মগেট-শাহবাগ চলাচলে যানজট এখন অবধারিত।

টানা লকডাউনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পরিবহন খাত। মাস দুয়েক হলো রাস্তায় গাড়ি চলছে। কিন্তু মামলা হচ্ছে আগের মতোই। রাজধানীতে চলাচলরত গণপরিবহনগুলোর বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ কারণে-অকারণে মামলা দিচ্ছে। ফলে নিঃস্ব হচ্ছে মালিকপক্ষ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহসড়কে নামলেই দেখা মেলে রাজধানীর সব উন্নয়নচিত্র। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, ওয়াসার লাইন, ডিপিডিসি, বিটিআরসি, ডেসকো, তিতাসসহ সব সেবা সংস্থা কিছু হলেই নেমে পড়ে রাস্তায়। কাজের শুরুতে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় থাকলেও তা শেষ করা নিয়ে তৈরি হয় বিভেদ!রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের ক্ষেত্রে সড়কের অপর পাশ বন্ধ করে দেওয়ার বিধান থাকলেও কোনো ভিআইপির জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থাপনা থাকার নিয়ম নেই। বিধি অনুযায়ী তাদের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল থাকবে। কিন্তু তাদের চলাচলের জন্য কোনো সড়ক বন্ধ বা অন্য কোনো যানবাহনের চলাচল বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। তারা কোনো অগ্রাধিকারও পাবেন না। উল্টো পথে চলা বা অন্য কোনো গাড়ি থামিয়ে নিজের পথ প্রশস্ত করারও কোনো সুযোগ নেই।

কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাজধানীতে হরহামেশাই সাধারণ যানচলাচলের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়। মোড়ে মোড়ে সিগন্যাল পার হতে ভিআইপিদের সাইরেন বাজিয়ে উল্টো পথে চলতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, নিরাপত্তা প্রটোকলের রেডবুক অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া রাস্তার একপাশ ফাঁকা করার বিধান নেই। তবে বিদেশি রাষ্ট্রীয় মেহমানদের বেলায় সরকার কেস টু কেস সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশি ভিআইপিদের সাধারণ নিয়মেই চলার নিয়ম। সাইরেন বাজিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে কোনো ভিআইপি সড়কে চলাচল করতে পারেন না। মন্ত্রী পদমর্যাদার কেউ সড়কে নামলে পুলিশি নিরাপত্তা পেতে পারেন, চলাচলে বিশেষ সুবিধা নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যত্যয় ঘটে— বলেন ওই কর্মকর্তা।

তিন বছরে ২০ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৫ মামলা ঢাকায়
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীতে ২০ লাখ ৬৭ হাজার ১৮৫ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে ১৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৭টি, ২০২০ সালে এক লাখ ৩৮ হাজার ৯৭৪টি এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলা হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৪ যানবাহনের বিরুদ্ধে।

শুরুতেই আমি নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। উন্নয়ন ও নগরবাসীর সেবা বাড়াতে বাধ্য হয়েই রাস্তা কাটতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সমন্বয় করে কাজ করার। ওয়াসা, তিতাসসহ ডিএনসিসি একসঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা
গত তিন বছরে জরিমানা করা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৪৮ লাখ ছয় হাজার ৮০৯ টাকা। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ৮২ কোটি ৩৭ লাখ ১১ হাজার ৮০৮ টাকা, ২০২০ সালে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে ৪৫ কোটি ৪৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪০১ টাকা।

পুলিশ সদর দফতরের ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে পাওয়া নথিতে দেখা যায়, গত আগস্ট মাসে সারাদেশে ৮০ হাজার ১৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে করা মামলায় জরিমানা আদায় হয়েছে ২৫ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৫ টাকা। আট মাসে সারাদেশে ছয় লাখ ৩৩ হাজার ৫৬২টি মামলা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৮৭ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৯ টাকা।

এদিকে, যানজট নিরসনের চেয়ে মামলাতেই বেশি আগ্রহ পুলিশের— এমন অভিযোগ করেছেন চালক ও যাত্রীরা। তারা বলছেন, মোড়ে মোড়ে যেন ওত পেতে থাকেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ছোটখাটো ত্রুটি দেখিয়ে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মিনি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে বেশি। অনেক সময় গতির কারণে লেন পরিবর্তন হলে বা পথচারী পারাপারের জায়গায় যানবাহন উঠে গেলে মামলা দিচ্ছেন দায়িত্বরত সার্জেন্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সপ্তাহের শুক্রবার ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর সড়কগুলোতে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানজটের কারণে ১০ কিলোমিটার পথ যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগছে। অফিস ছুটি ও খোলার সময় যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেয়ে সিগন্যাল বা মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন যানবাহন আটকে মামলা দিতে দেখা যায় সার্জেন্টদের।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: