রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চাপে পড়বে জীবন

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যে বাড়ানো হলো জ্বালানি তেলের দাম। আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) থেকেই কার্যকর হচ্ছে ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন দাম। এক লাফে লিটার প্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে পরিবহন ও কৃষি ব্যয় বাড়বে, প্রভাব পড়তে পারে বিদ্যুতের দামেও; সবমিলিয়ে চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষ।

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি যেমন থমকে গিয়েছিল, একইভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আয়ের ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন, অনেকের ব্যবসাও বন্ধ হয়েছে। ফলে আয় কমে এসেছে দেশের একটি বড় অংশের মানুষের। এর বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার মধ্যেই জ্বালানি তেলের এই দামের প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার (৩ নভেম্বর) রাত ১০টায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার পর হঠাৎ করে ১৫ টাকা লিটারে বাড়ানো যুক্তিযুক্ত কিনা জানতে চাইলে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এইভাবে এত দাম বাড়ানো মোটেও যৌক্তিক হয়নি। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে তিন মাস সময় লেগে যায়। প্রতিদিনের তেল তো আর বিপিসি প্রতিদিন কিনে আনে না। একইভাবে এলপিজি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়েও দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কমে তখন তারা কিন্তু সহজে দাম কমান না। লোকসান পোষানোর কথা বলতে থাকেন। এটা এক ধরনের লুণ্ঠনমূলক আচরণ।’

সাধারণ মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিডের কারণে এমনিতেই দেশের ৭৭ ভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই কষ্ট হচ্ছে। আর এখন তো তেলের দাম বাড়ার কারণে পরিবহন ব্যয়, পণ্যের ব্যয় সব বাড়বে এবং এই বৃদ্ধি সমস্ত উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করবে। পণ্যের ব্যয় বৃদ্ধিসহ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার জনগণের স্বার্থ একেবারেই দেখলো না।’

এই তেলের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে জ্বালানি বিভাগ জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে জালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্টোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। সেই সময় ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা, কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা, অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে—এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে পরিবহন খাতে। তারা তো রাতারাতি পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে দেবে। এই দাম বৃদ্ধি যদি ধাপে ধাপে করতো, তাতে হয়তো সবাই কিছুটা মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেতো। এত বেশি বাড়ানো দেশের অথনীতির ওপর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। পরিবহন ব্যয় বাড়ায় আমাদের নিত্যদিনের ব্যয় যেমন বাড়বে পাশাপাশি এই অজুহাতে বেড়ে যেতে পারে বিদ্যুতের দামও। কারণ আমাদের এখনও অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র ডিজেলচালিত। একইসঙ্গে সেচকাজে ডিজেলের ব্যবহার হওয়ায় কৃষিতেও এর প্রভাব পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে যে দাম বাড়ালেন, কমলে সেই দাম কমাতেও হবে। আমাদের এইখানে সাধারণত বাড়ানোর পর দাম ওই রকমই রেখে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিজেলের সঙ্গে সঙ্গে কেরোসিনের দাম বাড়ানোর ফলে কেরোসিনের ওপর নির্ভরশীল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে নেমে আসবে আরও কঠিন পরিস্থিতি।’ সরকারের এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত ছিল বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: