সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪

রায়ের পর আলাদা কনডেম সেলে প্রদীপ-লিয়াকত

বহুল আলোচিত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে সোমবার। এতে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ১৫ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৬ জনের যাবজ্জীবন এবং ৭ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে ৩০০ পৃষ্ঠার এ রায় দেওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড পাওয়া প্রদীপ ও লিয়াকতকে আলাদা করা হয়েছে। জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে, জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্য সুবিধা দেওয়া হবে। আজ রাতে এ তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার জেল সুপার নেছার আলম।

সন্ধ্যায় ফাঁসির আসামিদের পুলিশি ভ্যানে করে কারাগারে নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, পরে প্রদীপ ও লিয়াকতকে অন্য আসামিদের থেকে পৃথক করা হয়, কারাগারের একটি কক্ষ কনডেম সেল ঘোষণা করে তাতে রাখা হয় তাদের। জেল কোড অনুসারে খাবারসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামি ‘কয়েদি’ হিসেবে গণ্য হওয়ায় অন্য কয়েদিদের সঙ্গে সেলে রাখা হবে। তবে খালাসপ্রাপ্তদের কাগজপত্র পেলে মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে, বলেন কক্সবাজার জেল সুপার নেছার আলম।

মামলার রায়ে যাদের যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক, এসআই, নন্দদুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা এবং পুলিশের সোর্স শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. নেজামুদ্দিন, নুরুল আমিন ও আয়াজ উদ্দিন।

অপরদিকে, মামলা থেকে যারা খালাস পেয়েছেন তারা হলেন- বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক, এএসআই, লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল কামাল হোসেন, সাফানুর করিম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক, এসআই, মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. আবদুল্লাহ ও মো. রাজীব।

এর আগে দুপুরে পৌনে ২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সিনহা হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি ওসি প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফের বাহারছড়া চেকপোস্টে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে দিবাগত রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
ওই ঘটনার ৫ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। এতে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যা ব।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৪ মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্তের পর ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সিনহা হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে। রায়ের পর্যবেক্ষণেও একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত বছরের ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর গত ২৩ আগস্ট সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শুরু হয় কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে। যা শেষ হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। এ মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৬৫ জন সাক্ষী।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: