সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪

ওসি প্রদীপ কা’ণ্ডে ৩০০ এতিম শি’শুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার

সে’নাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মক’র্তা মেজর সিনহা মো: রাশেদ খান হ’ত্যা মা’মলার আ’সামি টেকনাফ থা’নার বরখাস্ত ওসি প্রদীপের মৃ’ত্যুদ’ণ্ডাদেশ শোনার পরই একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা।

আঙ্কেল আমা’র বাবাকে হ’ত্যা করে তিন বোনকে এতিম করে দিয়েছে ওসি প্রদীপ। এখন আমাদের পড়াশোনা বন্ধ। অভাবের কারণে ঠিকমতো খেতে পারি না। থাকি অন্যের বাসায়। আমি বাবা হ’ত্যার বিচার চাই। প্রদীপের ফাঁ’সি চাই।’

সে’নাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্ম’দ রাশেদ খান হ’ত্যা মা’মলার রায়ে ৩১ জানুয়ারি টেকনাফ থা’নার সাবেক ওসি প্রদীপের মৃ’ত্যুদ’ণ্ডাদেশের পর প্রক্রিয়া জানতে চাইলে কাঁদতে কাঁদতে এক কথা বলে ৭ বছর বয়সি সাকিয়া আক্তার। সে টেকনাফে নাজির পাড়ায় পু’লিশের সঙ্গে কথিত ব’ন্দুকযু’দ্ধে নি’হত দিনমজুর কৃষক নুর মোহাম্ম’দের মে’য়ে। তার আরও দুই বোন রয়েছে। নাম সাদিয়া আক্তার (১০) ও মাহিয়া আক্তার (৫)।

কৃষক নুর মোহাম্ম’দের স্ত্রী’ (সাকিয়ার মা) লায়লা বেগম বলেন, ‘টেকনাফ থা’নার তৎকালীন ওসি প্রদীপ আমা’র স্বামীকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে প্রথমে ৪৫ লাখ পরে ২৫ লাখ টাকা দাবি করে। ধারদেনা করে তিন লাখ টাকা দিলেও আমা’র স্বামীকে হ’ত্যা করে সে। এখন সন্তানদের নিয়ে বড় ক’ষ্টে আছি। এতিম তিন শি’শুকে তিনি ঠিকমতো খাওয়াতে পারছি না। মাঝে মাঝে আত্মীয়স্বজন সহায়তায় দিলেও তিন কন্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’

সাকিয়াদের মতো কথিত ব’ন্দুকযু’দ্ধে বাবা হারিয়েছেন একই এলাকার অবুঝ শি’শু মু’স্তাকিম (৪)। সে ভালো’ভাবে কথা বলতে না জানলেও কেউ বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে শুধু বলেন, ‘প্রদীপ আমা’র বাবাকে গু’লি মে’রেছে। আমি আল্লাহকে বিচার দিয়েছি।’

মু’স্তাকিমের মা রাজিয়া বলেন, তৎকালীন ওসি প্রদীপ মানুষের ঘর ভাঙচুর করার সময় সেখানে দাঁড়িয়ে দেখছিল আমা’র স্বামী কামাল। এ কারণে তাকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার হ’ত্যা করে প্রদীপ। অভাবের কারণে ছে’লের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন আমি উদ্বিগ্ন।

টেকনাফ হৃীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গ্রামের শাহ আলম জানায়, তার দুই ভাইকে একসঙ্গে কথিত ব’ন্দুকযু’দ্ধের নামে হ’ত্যা করেছে ওসি প্রদীপ। একইভাবে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই টেকনাফ হোয়াইক্যং সাতঘরিয়াপাড়ায় ওসি প্রদীপের কথিত ‘ব’ন্দুকযু’দ্ধে’ নি’হত হন হতদরিদ্র মো. হোসেন ও মোহাম্ম’দ কাশেম। তারা আপন দুই ভাই। দুই ভাইয়ের ৯ ছে’লেমে’য়ে রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এখন ভিক্ষাবৃত্তি ও স্থানীয়দের সহায়তায় চলছে তাদের জীবন।

স্থানীয়রা জানান, পূর্বশত্রুতার জেরে স্থানীয় এক ব্যক্তি কোটি টাকার বিনিময়ে ওসি প্রদীপকে ভাড়া করে হতদরিদ্র দুই ভাইকে হ’ত্যা করে ইয়াবা কারবারি হিসাবে প্রচার করে।

টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যানের শাহাজান মিয়া জানান, তার ইউনিয়নে প্রদীপ আমলে কথিত ‘ব’ন্দুকযু’দ্ধে’ আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ জন নি’হত হয়েছেন। তারা অন্তত অর্ধশতাধিক শি’শু সন্তান রেখে গেছেন। অভাবের কারণে অনেকের পরিবার ভিক্ষাবৃত্তি করে চলছে বলে শুনতে পেয়েছি। তিনি আরও জানান, ব’ন্দুকযু’দ্ধে নি’হতদের তালিকা অনুযায়ী খোঁজ নিলে টেকনাফ উপজে’লায় তিনশর বেশি এতিম শি’শু পাওয়া যাবে।

টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহম’দ আনোয়ারী বলেন, ‘ওসি প্রদীপ আমলে জানামতে আমা’র ইউনিয়নে ব’ন্দুকযু’দ্ধে ২১ জন নি’হত হয়েছেন। নি’হতদের অন্ততপক্ষে ৭০ জন শি’শু ছে’লেমে’য়ে রয়েছে। বেশিরভাগ পরিবারই আর্থিকভাবে ক’ষ্টে রয়েছে বলে শুনতেছি। এমনকি অনেক শি’শু লেখাপড়া বাদ দিয়ে শি’শুশ্রমে জড়িয়েছে। কেউবা পেটের দায়ে ভিক্ষাবৃত্তি করছে।

মানবাধিকার কর্মী ও টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা জাহেদ হোসেন বলেন, টেকনাফে ব’ন্দুকযু’দ্ধের নি’হতদের মধ্যে আনুমানিক ২০ থেকে ২৫টি পরিবার মোটামুটি আর্থিকভাবে সচ্ছল। বাকি ১৮০টি পরিবার হতদরিদ্র। এসব পরিবারের ভা’র কেউ গ্রহণ না করলে শি’শুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে যাবে।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: