রবিবার, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪

মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় গভীর সাগরে যেতে প্রস্তুত জেলেরা

ইলিশ সংরক্ষণে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতে। মাছ ধরতে আবারও গভীর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করেছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ও গাবুরা ইউনিয়নের জেলেরা। তাদের অপেক্ষা বন বিভাগের অনুমতির। গতবারের লোকসান এবার পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনুমতি পেলে আজ অথবা কাল জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশ করবেন। জীবিকার তাগিদে তাদের প্রাথমিক গন্তব্য সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চর। সুন্দরবনের ভেতরে বঙ্গোপসাগরের বুকে এই চরে পাঁচ মাসের জন্য জেলেরা অস্থায়ী আবাস ও চাতান (মাছ শুকানোর জায়গা) তৈরি করবেন। চর থেকে গভীর সাগরে গিয়ে জাল পাতবেন। জালে ওঠা মাছ নিয়ে আবার ফিরবেন অস্থায়ী আবাসে। কোস্টগার্ডেও তৎপরতায় জলদস্যুদের হামলা কমলেও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী জেলেরা জাল পেতে আমাদের ছেলেদের ক্ষতি করে।

সাতক্ষীরা এবং খুলনার কয়রার জেলেদের নিয়ে গঠিত ‘চাকলা বেল্ট’ সমিতির সভাপতি আব্দুর রউফ বলেন, জেলেদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সুন্দরবনে প্রবেশে এখন অনুমতির অপেক্ষা। এ বছর চাকলা বেল্টে প্রায় ২২০ জন বহারদার রয়েছেন। তাঁদের অধীনে ১০,৫৬০ জন জেলে ও কর্মচারী রয়েছেন। তিনি জানান, ‘আমাদের জেলেরা বঙ্গোপসাগরের যে অংশে জাল পাতে ভারতীয় জেলেরাও এসে সেখানে জাল পাতায় আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।’

চাকলা বেল্টের সেক্রেটারি আব্দুল হাকিম গাইন বলেন, একজন বহারদার একটি ট্রলারে ৩টি জাল, ১২ জন শ্রমিক ও প্রায় ১৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামেন। পাঁচ মাসে একটি ট্রলারের বহার চালাতে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়। এরপর লাভের ভাবনা।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, ইলিশ সংরক্ষণে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতে। ২৬ অক্টোবর থেকে জেলেরা সুন্দরবনে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। পর্যায়ক্রমে এক মাস করে এ অনুমতির মেয়াদ বাড়ানো হয়। সবশেষ আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলেরা দুবলার চরে থাকার অনুমতি পাবেন।

এদিকে গত মৌসুমে আশানুরূপ মাছ না পাওয়ায় সমুদ্রগামী প্রায় ৮০ শতাংশ জেলেকে লোকসান গুনতে হয়েছে। তাদের একজন সুভদ্রাকাটি গ্রামের আব্দুল্লাহ গাজি বলেন, একজন পাওনাদারকে জাল ও কাছি দিয়েছি। দুটি ট্রলার বিক্রি করে দুজনের ঋণ শোধ করেছি। এখনো প্রায় ১০ লাখ টাকা ঋণ। আমার ছেলেরা এ বছর অন্য জেলেদের কর্মচারী হিসেবে কাজ করছে। ঋণের চাপে এলাকা ছেড়ে খুলনায় কৃষি খামারে মাসিক বেতনে কাজ করছি।

কুড়িকাহনিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল মোড়ল বলেন, ১৪–১৫ বছর সাগরে মাছ ধরতে যাই। এর মধ্যে গত বছর সবচেয়ে কম মাছ পড়েছে। এতে প্রায় ৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। আবার ঋণ নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: