শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায় শীর্ষে যারা

প্রতিবছরের মতো চলতি বছরও বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিম ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে জর্ডানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার’।
দ্য মুসলিম ৫০০: ৫০০ ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস ২০২৩’ শীর্ষ ওই তালিকায় ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন ভারতের জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ মাদানি ও ‘ওম্যান অব দ্য ইয়ার’ তথা বর্ষসেরা নারী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান অনুবাদক আয়েশা আবদুর রহমান বিউলি।
তালিকায় প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বদের শীর্ষে রয়েছেন সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ ও পাকিস্তানের খ্যাতনামা মুফতি আল্লামা তকি উসমানি।

তালিকায় আরও রয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, সৌদি প্রধানমন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ও নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বুহারি।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মগুলোর অন্যতম ইসলাম। বিশ্বজুড়ে এ ধর্মের অনুসারী তথা মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। দেশ, জাতি ও গোষ্ঠী পৃথক পৃথক হলেও তারা সবাই এক উম্মাহ তথা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের অংশ।
তালিকায় ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’ বা বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব মাওলানা মাহমুদ মাদানি একজন ভারতীয় স্কলার, রাজনীতিক ও সমাজকর্মী। ১৯৬৪ সালে উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ১৯৯২ সালে তিনি পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।

বর্তমানে ভারতের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের (জেইউএইচ) একাংশের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহমুদ মাদানি। সব সময়ই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আপ্রাণ চেষ্টা তার অনন্য বৈশিষ্ট্য।

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজ্যসভায় রাষ্ট্রীয় লোকদল (আরএলডি) দলের সদস্য হিসেবে ২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন মাহমুদ মাদানি।
ভারতে মুসলিম জনসাধারণের জন্য শিক্ষা ও আইনি অধিকার নিশ্চিত করা ও সমাজসেবায় তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানির (রহ.) দৌহিত্র ও সাইয়্যিদ আসআদ মাদানির (রহ.) সন্তান।

দ্য মুসলিম ফাইভ হান্ড্রেড ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, মাওলানা মাহমুদ মাদানি দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দের (জেইউএইচ) সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা, ইসলামোফোবিয়া তথা ইসলাম ধর্ম নিয়ে অহেতুক ভীতির মতো বিতর্কিত বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করেন তিনি।

জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দীর্ঘ দুই দশকে গুজরাট, বিহার, দিল্লি, তামিলনাড়ু, কাশ্মীর, কেরালা, আসাম, ইউপি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ইত্যাদি স্থানে ট্র্যাজেডির শিকার ব্যক্তিদের নানাভাবে সহাগিতা করেছেন।
এ ছাড়া সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আন্দোলনের সমর্থনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ত্ববাদনীতির জন্য তার উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তার তত্ত্বাবধানে আধুনিক সময়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তার সংগঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হাজার হাজার মক্তব ও মাদ্রাসার লাখ লাখ শিশু শিক্ষার্থীর জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা কারিকুলামের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা কারিকুলামকে উন্নত করে একটি প্রকল্প শুরু করেন, যার মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্তরে (দশম শ্রেণি) উত্তীর্ণ হিসেবে স্বীকৃত দেয়া হয়।

তরুণদের মধ্যে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জমিয়ত ইয়ুথ ক্লাব চালু করেন মাহমুদ মাদানি। বিশ্বখ্যাত ভারত স্কাউটস অ্যান্ড গাইডসের তত্ত্বাবধানে সমাজে তরুণদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রদান করা হয়।



Comments are Closed

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: